অনলাইন ডেস্ক ::
ছেলেকে আটকের পর ঘুষের টাকা না পেয়ে হত্যা করে লাশ গুম করা হয়েছে সন্দেহে ১৬ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে যশোরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে অভিযোগ করেছেন হিরা খাতুন নামের এক নারী। আদালতের বিচারক শাহিনুর রহমান অভিযোগটি আমলে নিয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দিয়েছেন।
গতকাল মঙ্গলবার দায়ের হওয়া এ মামলায় যশোর কোতোয়ালি থানার সাত পুলিশ কর্মকর্তাসহ ১৬ পুলিশ সদস্যকে আসামি করা হয়েছে। তাঁরা হলেন এসআই এইচ এম শহিদুল ইসলাম, এসআই আমির হোসেন, এসআই হাসানুর রহমান, এএসআই রাজন গাজী, এএসআই সেলিম মুন্সি, এএসআই বিপ্লব হোসেন, এএসআই সেলিম আহম্মেদ, কনস্টেবল আরিফুজ্জামান, কনস্টেবল রফিকুল ইসলাম, কনস্টেবল মো. রমজান, কনস্টেবল হাবিবুর রহমান, কনস্টেবল আবু বক্কার, কনস্টেবল মিজান শেখ, কনস্টেবল মাহমুদুর রহমান, কনস্টেবল রাজিবুল ইসলাম ও কনস্টেবল টোকন হোসেন। আসামিদের অনেকেই বর্তমানে যশোর কোতোয়ালি থানায় কর্মরত নেই।
বাদী যশোর শহরের শংকরপুর এলাকার হিরা খাতুন মামলার বিবরণে উল্লেখ করেন, গত ৫ এপ্রিল সকাল ১০টার দিকে তাঁর একমাত্র ছেলে সাইদ ও তার বন্ধু শাওনকে যশোর শহরের পৌর পার্ক থেকে আটক করে পুলিশ। খবর পেয়ে তিনি সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন যে পুলিশ গাড়িতে করে সাইদ ও শাওনকে নিয়ে যাচ্ছে। এ সময় তিনি দৌড়ে গাড়ির কাছে গিয়ে এসআই শহিদুল ইসলামের কাছে ছেলেকে আটক করার কারণ জানতে চান। তখন এসআই শহিদুল ইসলাম তাঁকে থানায় গিয়ে এ ব্যাপারে কথা বলতে বলেন। কিন্তু থানার সামনে গিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত বসে থাকলেও পুলিশ তাঁকে থানায় ঢুকতে দেয়নি। সন্ধ্যা ৭টার দিকে এসআই শহিদুল ও এসআই আমির হোসেন তাঁকে ডেকে ছেলেকে ছাড়ানোর জন্য দুই লাখ টাকা দাবি করেন।
টাকা না পেলে দুজনকে মেরে লাশ গুম করে ফেলার হুমকি দেন। কিন্তু ওই পরিমাণ টাকা দেওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি। এক দিন পর ৭ এপ্রিল পত্রিকা মারফত তিনি জানতে পারেন যে তাঁর ছেলে ও শাওন পুলিশের কাছ থেকে পালিয়ে গেছে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি থানায় যান। কিন্তু সেখানে কোনো তথ্য না পেয়ে আদালতে গিয়ে জানতে পারেন যে পুলিশ ৬ এপ্রিল একটি মামলা করেছে, যেখানে তাঁর ছেলে সাইদ ও শাওন পালিয়ে গেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এরপর ছেলেকে উদ্ধারের জন্য তিনি বারবার থানায় গেলেও আসামিরা তাঁর সঙ্গে খারাপ আচরণ করে ফিরিয়ে দেন। কোনো উপায় না পেয়ে গত ৩০ মে তিনি সংবাদ সম্মেলনও করেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত ছেলে ও ছেলের বন্ধুর কোনো সন্ধান তিনি পাননি। তাদের দুজনকে পরিকল্পিতভাবে অপহরণ, ঘুষ দাবি ও ঘুষ না পেয়ে হত্যা করে লাশ গুম করা হয়েছে বলে তিনি সন্দেহ করছেন।
বাদী হিরা খাতুনের আইনজীবী অজিত কুমার দাস বলেন, আদালত বাদীর অভিযোগ আমলে নিয়ে বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দিয়েছেন। তবে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সালাহউদ্দিন আহমেদ এ অভিযোগকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও কাল্পনিক দাবি করে বলেন, একটি কুচক্রী মহল পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে এমন অভিযোগ করছে।
পাঠকের মতামত: